1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বর্তমান প্রজন্মের জন্য উপহার ‘গেরিলা’

১৫ ডিসেম্বর ২০১১

মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত ফিচার ফিল্ম ‘গেরিলা’৷ পরিচালনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, বর্তমান তরুণ প্রজন্মের জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধার উপহার ‘গেরিলা’৷

https://p.dw.com/p/13TGh

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা অঞ্চলে যুদ্ধ করেছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু৷ রাজধানীতে সবচেয়ে সংগঠিত ছিল পাকিস্তানি বাহিনী৷ সেই বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা পদ্ধতিতে লড়েছেন বাচ্চুরা৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, একাত্তরের ফেলে আসা স্মৃতির কথা৷ যুদ্ধের সময় একটা বিষয় তাঁকে বিমোহিত করেছিল৷ সেটি মানবিক সম্পর্ক৷ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছে সাধারণ মানুষ৷ অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কেউ কাউকে চেনে না৷ তবুও মুক্তিযোদ্ধা জেনে সব ভয় দূরে ঠেলে গ্রামের সাধারণ মানুষ যোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছে৷

নাসির উদ্দীন ইউসুফ স্মরণ করেন, একটি পরিবারের কথা৷ যুদ্ধের সময় অস্ত্র-গোলাবারুদ ঢাকার আশেপাশে কেরানিগঞ্জ, ধামরাইয়ে লুকিয়ে রাখতেন মুক্তিসেনারা৷ সেখান থেকে সুযোগ বুঝে ঢাকায় প্রবেশ করে বিভিন্ন অভিযান চালানো হতো৷ কেরানিগঞ্জে একটি পরিবারের কাছে লুকানো ছিল এরকম কিছু অস্ত্র৷ সেখানে একদিন বাচ্চু কিছু অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পরীক্ষা করে দেখছিলেন৷ সেসময় একটি দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি৷ এরপরই তিনি আবিষ্কার করেন মানুষের মধ্যকার মানবিক সম্পর্কের বিষয়টি৷ বাচ্চু বলেন, ‘‘সেদিন শুক্রবার ছিল, আমি সেবাড়িতে ভাত খেলাম৷ খাওয়ার পর আমাকে কৃষক এবং তার স্ত্রী আমাকে পায়েস খেতে বললেন৷ আমি জানতে চাইলাম, পায়েস কেন? আপনি যে বেঁচে গেছেন আজকে, আমার ছেলে বলেছে, আমরাও বাইরে থেকে দেখেছি, সেজন্য মসজিদে মিলাদ পড়িয়েছি এবং সিন্নি দিয়েছি''৷

Audioslideshow Pakistan Bangladesh Bürgerkrieg
ছবি: AP

বাচ্চু বলেন, ‘‘আমি ভাবলাম এই মানুষগুলোর সঙ্গে আমার কোন আত্মার সম্পর্ক নেই৷ এমনকি চেনাজানা নয়৷ এই মানুষগুলো একাত্তর সালে যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল আমাদের সঙ্গে, সেটি রক্তের সম্পর্ককেও অতিক্রম করে যায়''৷

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সক্রিয় হন নাসির উদ্দীন ইউসুফ৷ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি৷ এই বীর সেনার কাছে স্বাধীনতার চল্লিশ বছর সম্পর্কে জানতে চাইলে বললেন, ‘‘আমি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে একটি ইতিবাচক অবস্থা দেখতে পাচ্ছি৷ যে সরকার ক্ষমতায় আছে তাদের কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ৷ যদিও আমরা মনে করি বাহাত্তরের সংবিধান পুরোপুরি ফেরত আনা উচিত ছিল৷ সেটি না করে পঁচাত্তর পরবর্তী পর্যায়ে যেভাবে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য এবং কিছু তল্পিবাহক এবং স্বৈরশাসকরা যেভাবে পুরো সংবিধানের স্পিরিটটাকে নষ্ট করেছে, সেটিকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে চেষ্টা দেখা যায় কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রবর্তিত হতে পারল না৷ এটি কিন্তু পুরো দেশকে এখন পর্যন্ত সংকটে রেখেছে, রাখবেও আগামী দিনে''৷

স্বাধীনতা পরবর্তী চল্লিশ বছরের মূল্যায়ন করতে গিয়ে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘‘চল্লিশ বছরে সবচেয়ে কষ্টের জায়গা হচ্ছে আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, মানবমুক্তির জন্য লড়াই করেছি, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছি, আমরা অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেছিলাম৷ সেই দেশটি কিন্তু আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি''৷

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সর্বশেষ চলচ্চিত্রের নাম গেরিলা৷ গত এপ্রিলে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবি ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে৷ কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গেরিলা সেরা ছবির মর্যাদা লাভ করেছে৷ গেরিলা নির্মাণের প্রেক্ষাপট জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন, ‘‘এটি ১৯৭১ সালের একটি শিল্প দলিল৷ একটি জাতির মুক্তির জন্য, একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য, স্বাধীনতার জন্য একটি জাতির সার্বজনীন লড়াই৷ সেই লড়াইয়ের একটি দলিল, প্রামাণ্য দলিল নয়, শিল্প দলিল উপস্থাপন করতে চেয়েছি৷ এবং এটি নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পূর্তিতে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উপহার দিতে চেয়েছি৷ আমি বলেছি, এটি আমার একটি উপহার একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে৷ নতুন প্রজন্ম এবং জাতিকে''৷ 

গেরিলা ছবির পাইরেটেড কপি কোথাও প্রচার না করতে বিশেষ অনুরোধ করেছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছবিটি বৈধভাবে প্রদর্শনে আগ্রহী তিনি৷ এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, জানান তিনি৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য